প্রশ্ন : পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান (১৯৫৬ সালে কার্যকর) কখন বাতিল করা হয়?
উত্তর: ১৯৫৮ সালের ৭ ডিসেম্বর।
প্রশ্ন : এ সংবিধান কে বাতিল করেন?
উত্তর: পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা।
প্রশ্ন : তখন প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: ফিরোজ খান নুন।
প্রশ্ন : ইস্কান্দার মীর্জা কখন সামরিক শাসন জারি করেন?
উত্তর: ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ফিরোজ খান নুনের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় সরকারকে উৎখাত করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা পাকিস্তানে প্রথম সামরিক শাসন জারি করেন।
প্রশ্ন : সামরিক শাসন কী?
উত্তর:
প্রশ্ন : প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা কাকে “প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক” হিসেবে নিযুক্ত করেন? (CMLA)
উত্তর: ৮ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খানকে “প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক” হিসেবে নিযুক্ত করেন।
প্রশ্ন : আইয়ুব খান কর্তৃক কত তারিখে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ক্ষমতাচ্যূত হন?
উত্তর: ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর আইয়ুব খান কর্তৃক প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মীর্জা ক্ষমতাচ্যুত হন।
প্রশ্ন : আয়ুব খান কবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন?
উত্তর: ২৮ অক্টোবর ১৯৫৮ সালে।
প্রশ্ন : এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী কে ছিলেন?
উত্তর: আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করেন। ফলে এ সময়ে কেউ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না।
প্রশ্ন : PODI ও EBDO এর পূর্ণরূপ কী?
উত্তর: PODO = PUBLIC OFFICER DISQUALIFICATION ORDER.
EBDO = ELECTIVE BODIES DISQUALIFICATION ORDER.
প্রশ্ন : PODO এবং EBDO মূলত কী ছিল?
উত্তর: PODO এবং EBDO মূলত দুইটি নিবর্তনমূলক আইন ছিল যা বিরোধী রাজনীতিবিদদের হয়রানি করার জন্য জারি করা হয়েছিল।
প্রশ্ন : কখন PODO এবং EBDO আদেশ দুটি জারি করা হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৫৯ সালের ৬ ও ৭ আগস্ট PODO এবং EBDO নামক দুটি আদেশ জারি করা হয়।
প্রশ্ন : এ আইন দ্বারা কী ধরনের হয়রানি করা হয়েছিল?
উত্তর: শুধু EBDO আইনের মাধ্যমেই ৮৭৭ জন রাজনীতিবিদ রাজনীতি বা সরকারি কোন কোন পদের জন্য অযোগ্য তা ঘোষণা করা হয়েছিল। যেমন: সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিব, আব্দুল গাফফার খানসহ কিছু ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেন।
প্রশ্ন : আইয়ুব খান কর্তৃক প্রবর্তিত গণতন্ত্রের নাম কী ছিল?
উত্তর: মৌলিক গণতন্ত্র।
প্রশ্ন : জেনারেল আইয়ুব খান কতসালে “মৌলিক গণতন্ত্র অধ্যাদেশ” জারি করেন?
উত্তর: ১৯৫৯ সালের ২৭ অক্টোবর।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্র মূলত কী ছিল?
উত্তর: মৌলিক গণতন্ত্র হলো আইয়ুব খান প্রবর্তিত এক নতুন ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় চারস্তর বিশিষ্ট একটি প্রশাসনিক কাঠামো চালু করা হয়।
প্রশ্ন : চারটি স্তরের নাম বলুন।
উত্তর: ক) পল্লী এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌর এলাকার শহর ও ইউনিয়ন কমিটিট।
খ) থানা পরিষদ (পূর্ব পাকিস্তানে) এবং তহবিল পরিষদ (পশ্চিম পাকিস্তানে)
গ) জেলা পরিষদ
ঘ) বিভাগীয় পরিষদ
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্রী (Basic Democrate-BD) কারা ছিলেন?
উত্তর: ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা মৌলিক গণতন্ত্রী বলে পরিচিত ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে ও পশ্চিম পাকিস্তানে ৪০ হাজার করে মোট ৮০ হাজার মৌলিক গণতন্ত্রী ছিল।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্রীদের কাজ কী ছিল?
উত্তর: মৌলিক গণতন্ত্রীদের ভোটেই রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হতেন। অর্থাৎ মৌলিক গণতন্ত্র ছিল একটি পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্র কেন প্রবর্তন করা হয়েছিল?
উত্তর: মন্ত্রিসভা ও প্রতিনিধি পরিষদকে আইয়ুব খানের অধীনে রাখার জন্যই মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তন করা হয়।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্রের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বলুন।
উত্তর: ক) ভোটাধিকার হরণ।
খ) দুনীর্তির বিস্তার।
গ) অগণতান্ত্রিক।
ঘ) প্রতারণা ও
ঙ) রাজনৈতিক অনীহা তৈরি ইত্যাদি।
প্রশ্ন : আইয়ুব খানের মৌলিক গনতন্ত্রের অধীনে কতটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: দুটি।
ক) প্রথমটি ১৯৬০ সালে।
খ) দ্বিতীয়টি ১৯৬৫ সালে।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্রের অধীন ১৯৬০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কে বলুন?
উত্তর: ১৯৬০ সালে সামরিক শাসন চালুর প্রায় দেড় বছর পর জেনারেল আইয়ুব খান তাঁর সামরিক শাসনকে বেসামরিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরাসরি নির্বাচন দেওয়ার ভয় থাকায় ১৯৬০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যাঁ/না নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপতির উপর আস্থা আছে কিনা সেটি জানতে মৌলিক গণতন্ত্রীগণ (৮০ হাজার ) হ্যাঁ/না বাক্রে ভোট দেন। প্রতিদ্বন্দী বিহীন কথিত ঐ নির্বাচনে একক প্রার্থী আইয়ুব খান মতকরা ৯৫,৬ ভাগ ভোট পেয়ে পরবর্তী পাঁচ বছর রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকার নামমাত্র বৈধতা পান।
প্রশ্ন : ১৫ দফা দাবি কী?
উত্তর: ১৯৬০ সালের কথিত নির্বাচন শেষে আন্দোলনরত ছাত্ররা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নিকট বিবৃতির মাধ্যমে ১৫টি দাবি উত্থাপন করে যা ১৫ দফা দাবি নামে পরিচিত।
প্রশ্ন : উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দাবি সম্পর্কে বলুন?
উত্তর: ক) সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তিদান।
খ) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার।
গ) সামরিক আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মুক্তি ।
ঘ) বাক স্বাধীনতা ও শিক্ষা সংক্রান্ত দাবি ইত্যাদি।
প্রশ্ন : তাহলে বলুন ৮ দফা দাবি কী?
উত্তর: ছাত্রদের ১৫ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে আইনসভায় সরকার বিরোধী গ্রুপ ৮টি দাবি সংক্রান্ত যে নীতিমালা গ্রহণ করে তািই ৮ দফা দাবি নামে পরিচিত।
প্রশ্ন : পাকিস্তানের ২য় সংবিধান প্রণয়নের জন্য কখন কমিশন গঠন করা হয়?
উত্তর: ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ কার্যকর হওয়া পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মীর্জা বাতিল করেন। ১৯৬০ সালে ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন আরেকটি সংবিধান প্রণয়ণের জন্য আইয়ুব খান একটি কমিশন গঠন করেন।
প্রশ্ন : এ কমিশনের সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দন
প্রশ্ন : পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংবিধান কার্যকর হয় কখন?
উত্তর: ১৯৬২ সালের ৮ জুন।
প্রশ্ন : ২য় সংবিধান কার্যকরের ফলে পাকিস্তানে কী ধরনের পরিবর্তন আসে?
উত্তর: ক) আইয়ুব খান সামরিক আইন স্থগিত করেন।
খ) দলীয় রাজনৈতিক অধিকার ফিরে আসে।
গ) আইয়ুব খান নিজেই “কনভেনশন মুসলিম লীগ” নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
প্রশ্ন : ১৯৬০ সালে সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত কমিশন পাকিস্তানের জন্য কোন ধরনের সুপারিশ করেন?
উত্তর: পরোক্ষ নিবাচন।
প্রশ্ন : এ সুপারিশের ভিত্তিতে কখন নির্বাচনঅনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: এ সুপারিমের ভিত্তিতে ১৯৬২ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় পরিষদ এবং ৬ মে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশ্ন : ১৯৬২ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন সম্পর্কে বলুন?
উত্তর: ১৯৬২ সালের নির্বাচনে শুধু মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করে এবং এককবাবে জয়লাভ করে। অপরদিকে, রিরোধী দলগুলো মিলে NDF গঠন করেন।
প্রশ্ন : NDF কী?
উত্তর: গণতন্ত্র পুণরুদ্ধার ও ১৯৫৬ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলাম, ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ মিলে আইয়ুব খান বিরোধী যে মোর্চা গঠিত হয় তাই NDF বা National Democratic Front।
প্রশ্ন : NDF কেন ব্যর্থ হয়?
উত্তর: ১৯৬৪ সালে আওয়ামীলীগ NDF থেকে বের হয়ে যায়। এতে NDF নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।
প্রশ্ন : মৌলিক গণতন্ত্রের অধীনে ১৯৬৫ সালে সম্পর্কে বলুন?
উত্তর: ১৯৬৫ সালের ২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইয়ুব খান বিরোধী একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য COP গঠিত হয় এবং মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহকে COP এর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করা হয়। আইয়ুব খান পূর্ব থেকেই মৌলিক গণতন্ত্রীদের নিজের অনুকূলে নিয়ে যান এবং নির্বাচনে তিনি জয়ী হন। ফাতেমা জিন্নাহ পরাজিত হন।
প্রশ্ন : তাহলে বলুন COP কী ছিল?
উত্তর: COP এর পূর্ণরূপ Combined Opposition Party বা সম্মিলিত বিরোধী জোট। মূলত ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আইয়ুব খানকে পরাজিত করতে আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামসহ বিরোধী দলগুলো মিলে একটি জোট গঠন করে যা COP নামে পরিচিত। ইহা ছিল একটি রাজনৈতিক কোশল। কিন্তু এই কৌশল আইয়ুব খানকে পরাজিত করতে ব্যর্থ হয়।
প্রশ্ন : COP কখন গঠন করা হয়?
উত্তর: ১৯৬০ সালের ২২ জুলাই কাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনে বিরোধী দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য COP গঠন করেন।