ভাইভা রুমে প্রবেশের আগে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করবেন । এটি সাধারণ ভদ্রতা । কিন্তু আপনি দরজা সামান্য খুলে অনুমতি চাইবেন । যথা: আসতে পারি স্যার? May I come in Sir? এখানে ইংলিশ বাংলা কোনোটাই বলতে সমস্যা বা বাধা নেই । কিন্তু এইটুকু বলতেই অনেক প্রার্থীর সমস্যা হচ্ছে । কথা আস্তে বলছেন ফলে ভিতরে শুনতেই পেল না । অথবা খুব উচ্চস্বরে বলে ফেলছেন । শ্রুতিকটু হয়ে যাচ্ছে । আপনি দরজা খুব ধাক্কা দিয়ে খুলছেন যা শোভনীয় হবে না । হয়তো একটু বেশিই ভিতরে ঢুকে পড়ছেন । ফলে এমন ও শুনতে হতে পারে—ভিতরে তো চলেই এসেছেন, আর অনুমতি চেয়ে কী হবে? তাই এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ খুবই ।
ভিতরে প্রবেশের পূর্বে কারো দিকনির্দেশনার প্রয়োজন আছে কিনা? আপনি ভাইবা রুমে ঢুকার আগে বেল বাজবে । তার আগে আপনি প্রবেশ করবেন না । কখনো কখনো কোনো নির্দিষ্ট স্টাফ আপনাকে বলে দিবে কখন প্রবেশ করতে হবে? তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকবেন । অযাচিতভাবে আগেই প্রবেশ করা অশোভনীয় এবং বিপজ্জনকও হতে পারে ।
সালাম: নিকটতম দূরত্বে গিয়ে সালাম বা আদাব দেবেন । আপনি খুব উচ্চস্বরে সালাম দিবেন না আবার খুব নিচু স্বরেও না । মনে রাখবেন সালাম স্পষ্ট করে দিবেন । সালাম দিয়েই আপনি আপনার ভাইভা শুরু করছেন । তাই সংবেদনশীলতা বজায় থাকে এমন ভাবেই সালাম দিন । হাসিমুখে সালাম দেয়া শোভনীয় ।
বসার জন্য অপেক্ষা করা: এটি একটি সাধারণ ভদ্রতা । আপনি যাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁরা অনেক সিনিয়র কর্মকর্তা । তাই অনুমতি ছাড়া বসা সিভিল সার্ভিসে গ্রহণযোগ্য নয় । আপনি যেহেতু সিভিল সার্ভিসেই আসতে চাচ্ছেন, তাই ভাইভা বোর্ডই আপনাকে বসতে বলবেন । তারপরই আপনি বসবেন ধন্যবাদ বলে । বসার সময় চেয়ার টেনে বসবেন যেন শব্দ না করে । আর তারপরও যদি চেয়ার শব্দ করেই ফেলে তাহলে আর কিছু করার থাকে না । আপনি ভাইভায় মনোযোগী হন ।
একসাথে দুইজন প্রশ্ন করলে অনুমতি নিয়ে আগে প্রথম প্রশ্নকর্তার উত্তর দিন। পরে দ্বিতীয় প্রশ্ন কর্তার উত্তর দিন।
প্রশ্ন না বুঝে উত্তর দিবেন না।
বোর্ডের প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই উত্তর দিবেন না।
উত্তর জানা না থাকলে আন্দাজে উত্তর দিবেন না কিংবা পান্ডিত্য দেখাবেন না।
উত্তর জানা না থাকলে বলুন- দুঃখিত স্যার, এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই।
বোর্ডের সদস্যদের সাথে আই কন্ট্যাক্ট করে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
To the point - এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
যে কোনো বিষয়ে কোনো অজুহাত খাড়া করা থেকে বিরত থাকুন।
কোনো তথ্য সম্পর্কে ছলনার আশ্রয় নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আত্মনিয়ন্ত্রণ : পরীক্ষার্থীদের অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য্যের সাথে মৌখিক পরীক্ষা মোকাবিলা করতে হবে। প্রশ্নকর্তার প্রশ্ন ভালোভাবে শুনে শান্তভাবে মার্জিতভঙ্গিতে আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দিতে হবে। উত্তর হতে হবে যথাযথ, চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক রাগ-ভয় নিয়ন্ত্রণ করে সুস্পষ্টভাবে উত্তর দিতে হবে। কোন প্রশ্ন না বুঝলে বিনয়ের সাথে আবার জিজ্ঞাসা করে শুনে ও বুঝে উত্তর দিতে হবে। দু'একটি ক্ষেত্রে দেখা যায় বোর্ড পরীক্ষার্থীর উদ্দেশ্যে রাগ প্রদর্শন করছেন কিংবা অপমানের চেষ্টা করছেন। এটিও পরীক্ষার অংশ। এটিকে নিয়ন্ত্রণ করলেই জয়।
শব্দ শব্দ খেলা : যে কোন মৌখিক পরীক্ষায় যারা অনেক ভালো করেন তাদের কাছে ভাইভা মানে ‘শব্দ শব্দ খেলা'। এসব মানুষ আগে থেকেই মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্নগুলো জানতে পারেন। অথচ এটি খুব কঠিন কাজ নয়। আপনি কিছু বিষয় ভালো করে জেনে নিন। এবার বোর্ডে আপনাকে যে প্রশ্নগুলো করছে তার উত্তর প্রদানের সময় উত্তরের ভেতর আপনার জানা বিষয়গুলো যোগ দিয়ে উত্তর দিন। দেখবেন পরবর্তী প্রশ্নগুলো আপনার বাছাইকৃত শব্দ থেকেই আসছে। পরীক্ষা শেষে আপনার মনে হবে It's a game এবং আপনি সেটাতে জিতেছেন। উদাহরণ : আপনি বিশ্বায়ন সম্পর্কে খুব ভালো শিখেছেন। কোন একটা প্রশ্নের উত্তরের সাথে যোগ করে দিন না ‘বিশ্বায়নের এ যুগে’ দেখবেন পরবর্তী প্রশ্নটি চলে আসবে ‘বিশ্বায়ন কী?'
আপনার বাচনভঙ্গিঃ এই সকল ক্ষেত্রে প্রার্থীরা সচেতন হন না একেবারে । একজন সরকারি কর্মচারী হওয়ার পর পাবলিক ডিলিং করতে হয় অনেক । তাছাড়া বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও অনুষ্ঠানেও বক্তব্য রাখতে হয় । তাই আপনার উচ্চারণ ও শব্দচয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আপনারা খেয়াল করে দেখবেন যখন কোনো আর্টিকেল লিখা হয় কোনো বিষয়ে তখন কিছু সুনির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হয় । যেমন: অর্থনৈতিক মন্দা, কিন্তু আমরা বলি অর্থনৈতিক খারাপ অবস্থা । এই শব্দগুলো আপনার কথার আবেদন ভিন্ন করে দিতে পারে। কিছু শব্দের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে। যেমন-মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ইত্যাদি।
ইংরেজিতে কথা বলা: ভাইভার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ইংরেজিতে কথা বলা । তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচলা প্রয়োজন ।
ভাষা: একটি ভাষা শিখতে হলে আমাদের ভাষাটিকে জানতে হবে । যত বেশি সম্ভব চর্চা করতে হবে । ইংলিশ সেই ভাষা যা আমরা প্রথম শ্রেণি থেকে চর্চা করে আসছি । তাও আমরা এখনো পুরোপুরি দক্ষ হতে পারি নাই । এর কারণ আমরা শুধু পরীক্ষার জন্য পড়ছি । ভাষা হিসেবে চর্চা করছি না । এই সিম্পল ধারণাটি আগে বুঝতে হবে । ভাইবাতে খুব বেশি ইংলিশে কথা বলতে হবে না । যেটুকু বলবেন তাও মুকস্থ করে যাবেন না । এর জন্য স্পোকেন ইংলিশের কোর্সও করতে হবে না । যেটুকু আপনার দরকার সেটুকু বারবার চর্চা করলেই হয়ে যাবে ।
মুদ্রা দোষ : কিছু কিছু লোকের কোন কোন বিষয়ে বদ অভ্যাস থাকে। যেমন চেয়ারে বসে পা নাচানো, কথা বলার সময় মাথায় হাত বোলানো, বার বার জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানো, জিহ্বা বের করা, কথা বলার ক্ষেত্রে কিছু শব্দ বার বার অহেতুক ব্যবহার করা প্রভৃতি। এগুলোকে মুদ্রাদোষ বলে । মুদ্রাদোষ অবশ্যই বর্জনীয়। বুঝলেন স্যার, বিষয়টা হলো, মানে মানে, বুঝলেন কী, মনে করেন, Suppose, কথা হলো গিয়ে, তার পর আপনার ইত্যাদি বর্জন করতে হবে ।